এস্তোনিয়া; Image Source: worldstrides.com

এস্তোনিয়া বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল দেশ

সেই ১৯৯৭ সাল থেকেই ১৩ লাখ জনসংখ্যার উত্তর-পূর্ব ইউরোপের বাল্টিক জাতি এস্তোনিয়া তাদের পুরো সরকার ব্যবস্থাকেই ডিজিটাল করে আসছিল। ফলে দেশটিতে এখন সব ধরনের সরকারি কর্মকাণ্ডই দেশটির নাগরিকরা অনলাইনের মাধ্যমেই সেরে ফেলতে পারছেন।

স্মার্টফোনেই দেশটির সব ধরনের সরকারি ফরম পূরণ করা যায়। এস্তোনিয়ার পথ অনুসরণ করে জাপান থেকে শুরু করে ফিনল্যান্ডের মতো দেশও তাদের সব সরকারি সেবা ডিজিটাল করার পদক্ষেপ নিয়েছে।

১৯৯০-এর দশক থেকেই স্কাইপের জন্মস্থল এস্তোনিয়া ১০০% ডিজিটাল সমাজ হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে। এ লক্ষ্যে তারা যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল তার নাম ছিল ই-এস্তোনিয়া।

যা বর্তমানে বিশ্ববাসীর সামনে একটি আদর্শ হয়ে উঠেছে যে, কীভাবে একটি সরকার তার সব কর্মকাণ্ড সফলভাবে একটি মাত্র অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সম্পাদন করতে পারে।

ই-এস্তোনিয়া ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, এই কর্মসূচি ‘ই-স্টেট এর বিবর্তন’। ১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরু করার পর ২০০০ সাল থেকেই এর মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের ট্যাক্স সংক্রান্ত কার্যক্রম অনলাইনেই সম্পাদন করে আসছে।

এ ছাড়া এর মাধ্যমে এস্তোনিয়ানরা মেডিক্যাল প্রেসক্রিপশন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফলও সংগ্রহ করতে পারছেন। এ ছাড়া ডকুমেন্টে স্বাক্ষর, ভোটদান কার্যক্রমও চলছে অনলাইনে। এমনকি বিদেশি নাগরিকদেরকেও নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে।

ই-এস্তোনিয়ার মুখপাত্র আন্না পিপারেল বলেন, ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী সরকারগুলোকেও তাদের কার্যক্রম ডিজিটাল করার জন্য সহায়তা করবেন তারা। ফিনল্যান্ড, জাপান এবং সাইপ্রাসও ইতিমধ্যে এস্তোনিয়ার সহযোগিতায় তাদের সরকারি সেবাসমূহ অনলাইন ভিত্তিক করা শুরু করেছে।

তারা হয় এস্তোনিয়ার কোনো কম্পানির সহায়তা নিচ্ছেন আর নয়তো এস্তোনিয়ান আইডি কার্ড সিস্টেম ধার করছেন। এস্তোনিয়ার প্রতিটি নাগরিককে এমন একটি ডিজিটাল পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে যা তারা সামাজিক নিরাপত্তাসহ ভোটদান এবং দুর্যোগ সহযোগিতার জন্যও ব্যবহার করেন।

ই-সরকার কর্মসূচিতে দেশটির প্রচুর লোকের জন্য কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে। পিপারেল বলেন, নতুন যেকোনো শিল্পের মতোই ই-এস্তোনিয়া কর্মসূচিতেও প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

আমাদের প্রচুর প্রকৌশলী, ডিজাইনার, টেস্টার, প্রগ্রামার এবং আর্কিটেক্ট দরকার হয়। এ ছাড়া কপি রাইটার, সোশ্যাল মিডিয়া এক্সপার্ট এবং ওয়েব ডেভেলপারও দরকার হয় প্রচুর।

ই-এস্তোনিয়ার মাধ্যমে ভিনদেশি লোকদেরকেও ‘ই-নাগরিকত্ব’ দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে একজন ভিনদেশিকে তাদের ডিজিটাল সরকারের একটি আইডি দেওয়া হবে এবং তার মাধ্যমে সব ধরনের অনলাইন সেবা সরবরাহ করা হবে।

আর কোনো হ্যাকার, সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং এমনকি সরকার নিজেও ই-এস্তোনিয়ার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। ২০০৭ সালে রাশিয়া ই-এস্তোনিয়ার ওপর প্রথম সাইবার হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু সাময়িক অসুবিধার পর দেশটি তা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, জনসংখ্যা কম হওয়ার কারণেই এস্তোনিয়ার পক্ষে তার পুরো সরকার ব্যবস্থাই অনলাইনে চালানো সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু বেশি জনসংখ্যার এবং জটিল সরকার ব্যবস্থা ও বড় দেশগুলোতে এভাবে শুধু অনলাইনের মাধ্যমেই সরকারি সেবা দেওয়া সম্ভব কিনা তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

শেয়ার করুন: