নেপাল

ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী নেপালের প্রতিরোধ যুদ্ধ ও প্রসঙ্গ কথা

১। ভারতীয় অবরোধ মোকাবেলায় নেপালের জাতীয় প্রতিরোধ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কেন ফোকাস করা হচ্ছেনা? সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ পৃথিবীর সকল নিপীড়িত জনগণের পাশে দাঁড়াতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাহলে আমাদের মিডিয়াকর্মীরা নেপালী প্রতিরোধ আন্দোলনকে ফোকাস করতে এমন সংকীর্ণতা প্রদর্শন করছে কেন? ভারতীয় আধিপত্য বলয় ভেঙে যাচ্ছে বলে কি তারা চিন্তিত? আন্তর্জাতিক পাতাজুড়ে Proximity ভিত্তিতে নয়, সত্যিকার Newsworthy ক্যাটেগরিতে নেপাল জায়গা পায়। সে জায়গা তাকে দিন, হে আন্তর্জাতিক ডেস্কের অনুবাদকর্মীরা।

২। নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নাম খড়গ প্রসাদ শর্মা ওলি।কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল(সংযুক্ত মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী)এর অবিসংবাদী এ নেতা একই সাথে মাও,চারু মজুমদার,মার্ক্সের আদর্শে অনুপ্রাণিত।পুঁজিবাদী ভারতের দুশ্চিন্তাটা এখানেই।সমাজতান্ত্রিক আদর্শের কেপি ওলি কখনো ক্যাপিট্যালিস্ট ভারতের আধিপত্য মেনে নেবেনা।আবার সম্পদ ও ব্যবসার জাতীয়করণ করলে তা নেপালের ভারতপন্থী বুর্জোয়া ও ভারতীয় বুর্জোয়াদের একচেটিয়ে বাণিজ্যের সুযোগ নষ্ট করবে।মুনাফালোভীদের তাড়িয়ে গণসম্পদ জনগণের হাতে তুলে দিলে ভারতের ক্ষতি।১৯৭৩ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বিপ্লবী কর্মকান্ডের কারণে কারাভোগ করা কেপি মাথানত করবে বলে মনে হয়না।আবার নেপালকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বানাতেও সে বদ্ধপরিকর।কারণ এই ধর্মীয় মিলের কথা বলেই ভারতীয় হিজিমনি নেপালে অবাধে প্রবেশ করে।তারপর নেপালের অর্থনীতি ও সংষ্কৃতি ভারতনির্ভর হয়।কেপি তা হতে দেবেন না মনে হচ্ছে।

৩। নেপালের সাধারণ জনগণের প্রশ্ন ভারত তাদের অভ্যন্তরে নাক গলানোর কে?তাদের রাষ্ট্র ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ না ‘সেকুলার’হবে তা নির্ধারণ করবে নেপালী জনগণ ও তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিবর্গ।খড়গ প্রসাদ সরকারকে জনগণ সংবিধান সংশোধনের ম্যান্ডেট দিয়েছে।ভারত এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার ন্যূনতম অধিকার রাখেনা।আসলে ভারতের ভীতি মাওবাদী তথা বামপন্থী তথা সমাজতান্ত্রিক আদর্শের কেপির ক্ষমতাগ্রহণ নেপালে ভারতের আধিপত্যবলয়কে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।কারণ কমিউনিস্ট নেপাল তিব্বতকে ট্র্যানজিট করে কমিউনিস্ট চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে পারে।সেটা শুরুও করেছে কেপি সরকার।১৯৮৯ এর ভারতীয় অবরোধের কথা স্মরণ করে কেপি শর্মা ভারতের ২০১৫ এর অবরোধকে অকার্যকর করতে বদ্ধপরিকর।তার প্রথম পদক্ষেপ নেপালে ভারতীয় সকল স্যাটেলাইট চ্যানেল সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ।

৪। দ্বিতীয় যে কারণে ভারত নেপালের ব্যাপারে কঠোর তার কারণ সমাজতান্ত্রিক কেপি সরকার নেপালকে ৭ টি প্রদেশে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।এর ফলে প্রদেশগুলো অর্ধ স্বায়ত্ত্বশাসিত হলেও তা ভারতের অবাধ বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।কারণ প্রত্যেকটি প্রদেশের পৃথক নিয়ম কানুন আইন এবং রাজ্যসরকার থাকবে।এর ফলে ক্যাপিট্যালিস্ট ভারতকে প্রতিটি প্রদেশ বা রাজ্যের সাথে পৃথক চুক্তি বা সমঝোতা করে ব্যবসা করতে হবে।এর ফলে প্রতিটি রাজ্যে আলাদা কর,আলাদা চুক্তি করতে হবে এবং ভারতের একচেটিয়ে বাণিজ্যে ভাঁটা পড়বে।এই শঙ্কা থেকে ভারতে বর্তমান সংবিধান পরিবর্তন করে প্রাদেশিক শাসন চালুর ব্যাপারে এমন কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। আবার সাতটি প্রদেশ হলে কোন সময় ক্ষমতা কিংবা অন্য কারণে নেপালে সংঘর্ষ হলে তা স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে ধাবিত হতে পারে যা ভারতের চিন্তার কারণ।কারণ ভারতের অভ্যন্তরে পনেরটির অধিকা রাজ্যে সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী রয়েছে।

৫। নেপালীরা নেপালী জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে দলমত নির্বিশেষে ভারতীয় আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় একতাবদ্ধ হয়েছে।সোস্যাল মিডিয়ায় ‪#‎BackOffIndia‬ হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছে নেপালী তরুন ও শিক্ষিত সমাজ।নেপালী সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরাও জনগণকে অবরোধ মোকাবেলা করতে অনুপ্রাণিত করছেন।অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক নেপালের কাছে পুঁজিবাদী ভারতের পরাজয় ঘটবে।ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে উত্তর কোরিয়া,ইরান,ভেনিজুয়েলা,বলিভিয়া,কিউবা,ইকুয়েডর ঠিক এমন অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে শক্ত জাতীয়তাবাদ তৈরি করেছে।এর ফলাফল দাঁড়িয়েছে জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের সংমিশ্রণে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদবিরোধী এক শক্তিশালী জাতিরগোষ্ঠীর উদ্ভব।খড়গ প্রসাদ শর্মা ওলির নেতৃত্ত্বে নেপাল তেমন এক প্রতিরোধ দুর্গ হবে বলে প্রত্যাশা করি।নেপালের প্রতিরোধ সফলতার উপর দক্ষিণ এশিয়ার আধিপত্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদীদের ভবিষ্যত্‍ নির্ভর করছে। জয় হোক নেপালের।জয় হোক সমাজবাদী পৃথিবীর এক ছোট্র শক্তির।জয় হোক নেপালী জাতীয়তাবাদের।সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ ও অনিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদ নিপাত যাক।

শেয়ার করুন: