'অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ খোঁজা জরুরি'

দেশের চলমান সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ বের করাই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য জরুরি বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেড় ঘন্টা বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা লিখিত বক্তব্যে এই প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সহিংসতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটা অগ্রহণযোগ্য। এটা এখনো থামাতে হবে। আমি সব রাজনৈতিক দলকে সহিংসতা বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছি। রাজনৈতিক দলগুলোর এখনই সংলাপে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ খোঁজা যে আরো জরুরি হয়ে পড়েছে, তার ওপর বৈঠকে আমি গুরুত্বারোপ করেছি।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল তিনটা ৫ মিনিটে কয়েকদিন ধরে অবরুদ্ধ থাকা বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় প্রবেশ করেন। দেড় ঘণ্টা স্থায়ী এই বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত গুলশানে বিরোধীদলীয় নেতার অবরুদ্ধ বাসায় প্রবেশ করার পর ৩টা ১০ মিনিটে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ও ৩টা ২০ মিনিটে অপর উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান আসেন। মার্কিন দূতের আগমন উপলক্ষে বাসার বাম পাশে সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি বালু‘র ট্রাক সরিয়ে দেয়। বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবনের দুই পাশের সড়কে পুলিশী বেষ্টনীর পাশাপাশি পাঁচটি বালুভর্তি ট্রাক রেখে দেয়া হয়েছে সড়কের ওপরেই। বৈঠক শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা রাষ্ট্রদূতের একটি লিখিত বক্তব্য সাংবাদিকদের সরবরাহ করেন।

লিখিত বিবৃতিতে ড্যান মজীনা বলেন, আমি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সাথের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। গত রোববার সুপ্রিম কোর্ট, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ঘটনাবলীতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আামি মনে করি, এসব ঘটনা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থি। এসব ঘটনার যেন কোনোভাবে পুনাবৃত্তি না ঘটে। একসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতারে উদ্বেগ প্রকাশও করেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ব্যাপক গ্রেফতারের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে আমি বিরোধী দলীয় নেতাকে বলেছি যে, যারা নিজ গণতান্ত্রিক অধিকার শান্তিপূর্ণভাবে চর্চা করতে চায়, তাদের ওপর এই বিষয়টি ভীতিমূলক প্রভাব ফেলে। এটি দুই পক্ষের মধ্যে ভবিষ্যৎ সংলাপের সাফল্যের ক্ষেত্রে গ্রেফতারকৃত নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লিখিত বিবৃতিতে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, সরকারের দায়িত্ব বিরোধী দলকে স্বাধীনভাবে নিজ মত প্রকাশ করার সুযোগ দেয়া এবং বিরোধী দলের দায়িত্ব একে শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবহার। এ বিষয়গুলো বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসা ঘিরে পুলিশী নিরাপত্তা বাড়ানোর পর থেকে দলের কোনো নেতাকে তার বাসায় ঢুকতে দেয়া হয় না। সোমবার ও আজ এই দুইদিনে বিদেশী কুটনীতিদের সাক্ষাৎ উপলক্ষ্যে তিন নেতাকে ঢুকতে দেয়া হলো। সোমবার অবরুদ্ধ বাসভবনে ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট গিবসন সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৃটিশ হাইকমিশনার-এর পর এটি কোনো বিদেশী রাষ্ট্রদূতের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ।

মঙ্গলবার বিকেলে এই অবরুদ্ধ বাসভবনে বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। ওই সাক্ষাৎ শেষে তিনি বেরুনোর পর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। অবশ্যই রাত ১টার দিকে গোয়েন্দা দফতর থেকে তিনি ছাড়া পান।

গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে বিরোধীদলীয় নেতার গুলশানের বাসা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তার বাইরে যাওয়ার ওপর আরোপ করা হয়েছে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। গত ২৯ ডিসেম্বরের গণতন্ত্রের অভিযাত্রার নয়া পল্টনের সমাবেশে খালেদা জিয়াকে সরকারের নির্দেশে পুলিশ যেতে দেয়নি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে একটি দল গতকাল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন এলাকা পর্যবেক্ষণ করেছে বলে জানা গেছে। তারা এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদনও সংশ্লিষ্টদের কাছে জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিরোধীদলীয় নেত্রীকে অবরুদ্ধ করে রাখার চতুর্থ দিন। সকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যা কিছুটা কমালেও দুপুরের পর আবারো তা বাড়ানো হয়।

শেয়ার করুন: